রাজপুত চিত্রকর্ম
রাজপুত চিত্রকর্ম বা রাজস্থানের চিত্রকর্ম, মূলত ১৭ এবং ১৮ শতকের সময়কালে, উত্তর ভারতের রাজপুতানা রাজদরবারে বিকশিত হয়েছিল এবং উন্নতি লাভ করেছিল।[১] মুঘল চিত্রশিল্পের সূক্ষ্ম রীতিতে প্রশিক্ষিত শিল্পীদের রাজকীয় মুঘল দরবার থেকে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছিল, তারা চিত্রকর্মের স্থানীয় ঐতিহ্যগুলি থেকে শৈলীর বিকাশ করেছিল, বিশেষত হিন্দু ধর্মীয় মহাকাব্য মহাভারত এবং রামায়ণকে চিত্রিত করেছিল।
অঙ্কনের বিষয়গুলি পরিবর্তিত হত, তবে সাধারণত শাসক পরিবারের প্রতিকৃতি, শিকার বা তাদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপ নিয়ে অঙ্কিত চিত্রগুলি জনপ্রিয় ছিল, এর পাশাপাশি মহাকাব্য বা হিন্দু পুরাণ থেকে বর্ণিত দৃশ্য এবং নামহীন ব্যক্তির কিছু প্রতিদিনকার চিত্রও জনপ্রিয় হয়েছিল। নির্দিষ্ট খনিজ, উদ্ভিদ উৎস, শঙ্খের খোলক থেকে রঙ নিষ্কাশিত করা হত, এমনকি মূল্যবান পাথর প্রক্রিয়াজাত করেও রঙ নিষ্কাশিত হত। স্বর্ণ ও রূপা ব্যবহার করা হত। একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর কাঙ্ক্ষিত রঙ পাওয়া যেত, কখনও কখনও ২ সপ্তাহ লেগে যেত। ব্যবহৃত তুলিগুলি খুব সূক্ষ্ম ছিল।[২]
বিষয়বস্তু
[সম্পাদনা]যদিও রাজপুত চিত্রগুলিতে বিষয়ের আধিক্য পাওয়া গেছে, সমস্ত রাজপুত কাজের সাধারণ মূল উপাদান হল স্থানের উদ্দেশ্যমূলক হেরফের।[৩] বিশেষ করে, সীমানার অভাব এবং চরিত্র ও ভূদৃশ্যের অবিচ্ছেদ্যতার উপর জোর দেওয়ার জন্য পূর্ণ স্থানগুলির অন্তর্ভুক্তি। এইভাবে, প্রাকৃতিক চরিত্রগুলির স্বতন্ত্রতা প্রায় প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, চিত্রিত পটভূমি এবং মানব ব্যক্তিত্ব উভয়ই সমানভাবে অভিব্যক্তিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
খাঁটি শৈল্পিক অবস্থানের বাইরে, রাজপুত চিত্রগুলি প্রায়শই রাজনৈতিকভাবে আহিত হয়ে থাকত এবং সেগুলিতে তৎকালীন সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে মন্তব্য থাকত। মেওয়ারের শাসকরা চেয়েছিলেন এই চিত্রগুলিতে তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা চিত্রিত করতে এবং তাঁদের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। তাই চিত্রকর্মগুলি প্রায়শই কোনও শাসকের উত্তরাধিকারের বা তাঁদের করা পরিবর্তনের ফলে সমাজের উন্নতির ইঙ্গিত দেয়।
এই উভয় কারণই রাজপুত চিত্রগুলিকে মুঘল চিত্রকর্ম থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা করে দেয়। কালানুক্রমিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই উভয় সংস্কৃতির একে অপরের সাথে সংঘর্ষ বেধেছিল, রাজপুত চিত্রগুলি কেবলমাত্র মুঘল কায়দা এবং সাংস্কৃতিক মানকেই ভাসা-ভাসাভাবে গ্রহণ করেছিল। জনপ্রিয় মুঘল শিল্পীদের (গোবর্ধন, হাশিম ইত্যাদি) দ্বারা ব্যবহৃত উপাদানগুলি, যেমন প্রতিকৃতিতে সুনির্দিষ্ট সদৃশতা, রাজপুত রচনায় পাওয়া যায় নি। তেমনিভাবে, রাজপুত কৌশলগুলি মুঘল চিত্রে দেখা যায় না: "আঠারো শতকের শুরুর দিকে, অতএব, রাজপুত চিত্রাঙ্কনগুলি অনন্যতার দিক দিয়ে ঐতিহ্যবাহী মুঘল ভঙ্গিমার চেয়ে চোখে পড়ার মত পৃথক।"[৪]
বিদ্যালয়সমূহ
[সম্পাদনা]১৬ শতকের শেষদিকে, রাজপুত কলা বিদ্যালয়গুলি স্বতন্ত্র শৈলীর বিকাশ শুরু করে, সেগুলি দেশজ শৈলীর পাশাপাশি পারস্য, মুঘল, চীনা এবং ইউরোপীয়দের মত বিদেশী প্রভাবের সমন্বয় ঘটায়। [৬] রাজস্থানী চিত্রকলায় চারটি প্রধান বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি শৈল্পিক শৈলী এবং উপ-শৈলী রয়েছে যেগুলি থেকে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যকে সনাক্ত করা যায়, যাঁরা এই শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। চারটি মূল বিদ্যালয় হল:
- মেওয়ার বিদ্যালয়, যেটিতে চাওয়ান্দ, নাথদুওয়ারা, দেবগড়, উদয়পুর এবং সওয়াড় শৈলীর চিত্রাঙ্কন হত।
- মারোয়ার বিদ্যালয়, যেটি কিষানগড়, বিকানের থেকে বিকানের শৈলীর চিত্রকলা, যোধপুর, নাগৌর, পালি এবং ঘানেরাও শৈলী নিয়ে গঠিত।
- হাড়োতি বিদ্যালয়, যেখানে কোটা, বুন্দি এবং ঝালাওয়ার শৈলী এবং
- আমের, জয়পুর, শেখাওয়াতি চিত্রাঙ্কন এবং উনিয়ারা চিত্রশৈলীর ধুন্দর স্কুল।[৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- তাঞ্জাবুর চিত্রকলা
- মুঘল চিত্রশিল্প
- ডালচাঁদ, ১৮ শতকের রাজপুত শিল্পী
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ "Rajput Miniature Painting"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২১।
- ↑ "Rajput Paintings"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২১।
- ↑ "RAJPUT PAINTING"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২১।
- ↑ Beach, 175
- ↑ "Krishna and Radha"। Philadelphia Museum of Art। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৮।
- ↑ Neeraj, Jai Singh (১৯৯১)। Splendour Of Rajasthani Painting। New Delhi: Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 13। আইএসবিএন 9788170172673।
- ↑ "Rajput Painting"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২১।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Beach, M, (1992). 1700–1800: The Dominance of Rajput Painting. In Mughal and Rajput Painting (The New Cambridge History of India, pp. 174–213). Cambridge: Cambridge University Press. doi:10.1017/CHOL9780521400275.008
- Kossak, Steven. (1997). Indian court painting, 16th-19th century. Metropolitan Museum of Art. আইএসবিএন ০৮৭০৯৯৭৮৩১
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- The City Palace Museum, Udaipur: paintings of Mewar court life. by Andrew Topsfield, Pankaj Shah, Government Museum, Udaipur. Mapin, 1990. আইএসবিএন ০৯৪৪১৪২২৯X.
- Splendour of Rajasthani painting, by Jai Singh Neeraj. Abhinav Publications, 1991. আইএসবিএন ৮১-৭০১৭-২৬৭-৫.
- Art and artists of Rajasthan: a study on the art & artists of Mewar with reference to western Indian school of painting, by Radhakrishna Vashistha. Abhinav Publications, 1995. আইএসবিএন ৮১-৭০১৭-২৮৪-৫.
- A study of Bundi school of painting, by Jiwan Sodhi. Abhinav Publications, 1999. আইএসবিএন ৮১-৭০১৭-৩৪৭-৭
- Court painting at Udaipur: art under the patronage of the Maharanas of Mewar, by Andrew Topsfield, Museum Rietberg. Artibus Asiae Publishers, 2001. আইএসবিএন ৩-৯০৭০৭৭-০৩-২.
- Rajput Painting, by Ananda K. Coomaraswamy, Publisher B. R. Publishing Corporation, 2003. আইএসবিএন ৮১-৭৬৪৬-৩৭৬-০.
- The artists of Nathadwara: the practice of painting in Rajasthan, by Tryna Lyons. Indiana University Press, 2004. আইএসবিএন ০-২৫৩-৩৪৪১৭-৪.
- Ghosh, P. (2012). The Intelligence of Tradition in Rajput Court Painting. Art Bulletin, 94(4), 650–652.
- Dalrymple, William, (2016). [১] The beautiful, magical world of Rajput art.] New York Review of Books, November 26, 2016.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Indian medieval painting schools - Rajput painting ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে