ইসরায়েল–কাতার সম্পর্ক
ইসরায়েল |
কাতার |
---|
ইসরায়েল–কাতার সম্পর্ক হল ইসরায়েল এবং কাতারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। কাতার ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে, কিন্তু (২০১৫ সাল পর্যন্ত) কাতার ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
কূটনৈতিক সম্পর্ক
[সম্পাদনা]২০১২ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করার অধিকার লাভ করে কাতার। এরপর তারা জানায় যে ইসরায়েল উত্তীর্ণ হতে পারলে তারা এই আয়োজনে ইসরায়েলকে স্বাগতম জানাবে।[১]
কাতার জাতীয় অলিম্পিক কমিটি এবং স্টেট অব ইসরায়েল মিলিতভাবে ইসরায়েলের গ্যালিলি অঞ্চলের সাখনিনের ইসরায়েলি আরব শহরে দোহা স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা করে। স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় দোহার কাতারি শহরের নাম অনুসারে। নেসেট সদস্য আহমদ তিবি এবং কাতার ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির মহাসচিব শেখ সৌদ আব্দুল রহমান আল থানির যৌথ বৈঠকে তিবি সাখনিনে খেলার পরিবেশের কথা উল্লেখ করেন, এবং তারপরেই এ স্টেডিয়ামের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কাতারের সংযোগের মূল কারণ ছিল দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক যে শান্তপূর্ণ এবং একত্রে কাজ করতে চায় তা প্রকাশ করা।[২]
২০১৩ সালে একদল ইয়েমেনি ইহুদিকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য কাতার ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে বলে জানা যায়। লেবাননের একটি সূত্র এ দাবি করে। সূত্রমতে ৬০ জন ইহুদি ইয়েমেনে যাবার পথে দোহায় ধরা পরে এবং সেখান থেকে থেকে ইসরায়েলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাদের।[৩]
ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দ অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ এর প্রেক্ষিতে তীব্রভাবে হামাসের প্রতি কাতারের কূটনৈটিক এবং অর্থনৈতিক সমর্থনের নিন্দা জানায়। কাতার জঙ্গিবাদের মুখ্য প্ররোচক বলেও তারা অভিযোগ করে।[৪] পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাভিগডর লিবারম্যান ইসরায়েল থেকে কাতার-ভিত্তিক আল জাজিরার অপসারণের দাবি জানান।[৫]
৯ই মার্চ, ২০১৫ সালে কাতারের রাষ্ট্রদূত ইসরায়েলের কাছ থেকে সরাসরি অনুমোদন প্রত্যাশা করেন, যেন গাজা ভূখণ্ডে পণ্যসামগ্রি রপ্তানির অনুমোদন চান। এর পূর্বেই মিশর রাফা সীমানা থেকে গাজায় পণ্য পরিবহনের অনুমতিতে না করে দেয়। প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষ এবং ফাতাহ ইসরায়েলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করায় কাতারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে।[৬][৭] রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক জিহাদ হার্ব দাবি করেন যে, "কাতার গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যকার ঝামেলার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে পারে, এবং এভাবে পিএ ও মিশরকে অন্যায়ভাবে অধিকার করে নিতে পারে।"[৬]
২০১৫ সালের জুন মাসে কাতার সরকার দোহায় অনুষ্ঠিত ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যকার আলোচনার পথ সুগম করে দেয়। এতে দুইদলের মধ্যে অন্তত ৫-বছর যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়।[৮]
কূটনৈতিক সফর
[সম্পাদনা]হামাসের প্রতি কাতারের ক্রমাগত সমর্থনের পরেও ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দ আমিরাতের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শিমন পেরেস ভাইস প্রিমিয়ার হিসেবে কার্যরত শেষ মাসে রাজধানী দোহায় উচ্চস্থানীয় সফর করেন। পেরেস ১৯৯৬ সালেও কাতারে সফর করেছিলেন, যখন তিনি সেখানে ইসরায়েলি বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।[৯]
২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইহুদ বারাল সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম চলাকালীন কাতারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন খলিফা আল-থানির সাথে দেখা করেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যভাগে কাতারের শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্যক্তি গাজা আলোচনার ব্যাপারে এবং জিলাদ শালিতের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেন বলে শোনা যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিপি লিভনি ২০০৮ সালের জাতিসংঘ সম্মেলনে কাতারের আমিরের সাথে সাক্ষাৎ করেন।[১০] এপ্রিল, ২০০৮-এ তিনি কাতারে সফর করেন এবং আমির, প্রধানমন্ত্রী এবং তেল ও গ্যাসমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।[১১]
অর্থনৈতিক সম্পর্ক
[সম্পাদনা]১৯৯৬ সালে কাতার ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে।[১২] ২০০০ সালে ইসরায়েলের কাতারি বাণিজ্যিক অফিস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হয়।[১৩]
২০০৯ সালের অপারেশন কাস্ট লিডের পর স্থায়িভাবে কাতার ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।[১৪] ২০১০ আলে ইসরায়েলের কাছে কাতার দুইবার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং দোহায় ইসরায়েলের মিশন পুনঃস্থাপনের জন্য বলে; তবে শর্ত ছিল যে ইসরায়েল কাতারকে গাজায় টাকা ও ভবননির্মাণসামগ্রি পাঠাতে দেবে, যেন গাজার সংস্কার করা সম্ভব হয় এবং সেইসাথে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে কাতারের অবদানের কথা স্বীকার করে একটি সাধারণ বিবৃতি দেবে। ইসরায়েল এই শর্ত মানতে অস্বীকার করে। এর কারণ হিসেবে তারা বলে কাতারের পাঠানো সামগ্রি হামাস কর্তৃক বাঙ্কার নির্মাণে এবং ইসরায়লের শহর ও নগরে ফায়ার রকেট ছোঁড়ার স্থানগুলো পুনঃনির্মাণে ব্যবহৃত হতে পারে। কারণ হিসেবে তারা আরো জানায় যে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যস্থতার জন্য কাতার ও মিশরের প্রতিযোগিতার ব্যাপারে কোনোক্রমেই মাথা ঘামাবে না।[১৫][১৬]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Walid, Tamara (২৯ জুলাই ২০১৩)। "Qatar would 'welcome' Israel in 2022"। দ্য ন্যাশনাল। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ Nahmias, Ro'ei (২০০৬-০১-১৪)। "Why "Doha" Stadium and not "HaShalom"?" (Hebrew ভাষায়)। Yedioth Ahronoth। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৮।
- ↑ "Qatar Helping Yemenite Jews Reach Israel?"। Israel National News। ২১ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ Miller, Elhanan (২৩ জুলাই ২০১৪)। "Israel singles out Qatar as key Hamas terror sponsor"। The Times of Israel। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Westcott, Lucy (২১ জুলাই ২০১৪)। "Foreign Minister Avigdor Lieberman Seeks to Ban Al Jazeera From Operating in Israel"। Newsweek। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ ক খ "Will Qatar-Israel relations threaten PA's relevance in Gaza?"। Al Monitor। ৬ এপ্রিল ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "PA's Abbas Fuming Over Qatar Ambassador's Praise for Israel"। Algemeiner Journal। ১৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ Lazareva, Inna। "Israeli and Hamas officials 'meet in Qatar to discuss a five year ceasefire deal'"। telegraph.co.uk। Telegraph Media Group Limited। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৫।
- ↑ "Peres on rare trip to Qatar"। Cosmos.ucc.ie। ৩০ জানুয়ারি ২০০৭। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ "Barak met with Qatari PM"। Ynetnews.com। ২৯ জুন ১৯৯৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ "Livni to Gulf leaders in Qatar : Iran the threat not Israel"। Israel National News। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০০৮।
- ↑ Machowski, Matthew (১৯ মে ২০১১)। "Qatar-Israel Relations: A Historical Overview"। MidEastJournal। Matthewmachowski.com। ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ "Qatar: Israel trade office closed"। Associated Press। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "Qatar profile - Timeline"। BBC। ২১ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ "A shameful rejection – Israel News"। Haaretz। ২০ মে ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ Ravid, Barak (১৮ মে ২০১০)। "Israel rejects Qatar bid to restore diplomatic ties"। Haaretz। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৩।