বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নাতন পদ্ধতিতে পাতন
শিল্পে পাতন‌ পদ্ধতির ব্যবহার
গবেষণাগারে পাতন প্রক্রিয়া
পাতনের গবেষণাগার প্রদর্শনী: ১: ২: স্থির পাত্র ৩: স্থির শীর্ষ ৪: থার্মোমিটার/স্ফূটন বিন্দু তাপমাত্রা ৫: ঘনক ৬: ঠাণ্ডা পানির প্রবেশ ৭: ঠাণ্ডা পানির বেরিয়ে যাওয়া ৮: পাতন/গ্রাহক ফ্লাস্ক ৯: শূন্যস্থান/ গ্যাস ইনলেট ১০: স্থির গ্রাহক ১১: তাপ নিয়ন্ত্রক ১২: নাড়ানি গতি নিয়ন্ত্রক  ১৩: নাড়ানি/তাপ পাত্র ১৪: তাপ(তেল/বালি) গোসল ১৫: নাড়ানি বলতে কুঁচি কুঁচি করে কাটা কাঠের টুকরা বা যান্ত্রিক ঘুটুনি বোঝানো হচ্ছে ১৬: শীতল গোসল
[]

পাতন হচ্ছে কোনো তরল মিশ্রণ থেকে উপাদান পদার্থগুলোকে বিবিধ বাষ্পীভবনঘনীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলাদা করা।[] এটা হতে পারে সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা (খাঁটি উপাদান পদার্থের কাছাকাছি), অথবা এটা আংশিকভাবে পৃথকও হতে পারে যাতে মিশ্রণের ঐ পদার্থটির ঘনমাত্রা বাড়ে।

পাতন ব্যবহার করা হয় উদ্বায়ী নয় এমন কঠিন থেকে তরলকে আলাদা করার জন্য, যেমন গাঁজানো পদার্থ থেকে অ্যালকোহলযুক্ত মদকে আলাদা করার ক্ষেত্রে, অথবা আলাদা আলাদা স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক তরল আলাদা করার ক্ষেত্রে, যেমন অপরিশোধিত তেল থেকে পেট্রোল, কেরোসিন এবং লুব্রিকেটিং তেলকে আলাদা করার ক্ষেত্রে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রাচীন নিকট পূর্ব (৩০০০-৩৩০ খীষ্টপূর্ব)

[সম্পাদনা]

১২০০ খীষ্টপূর্বের আক্কায়িান ট্যাবলেটে পাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যাতে সুগন্ধি উৎপাদনের প্রক্রিয়ার বর্ণনা আছে। ট্যাবলেটগুলি প্রমাণ করে যে পাতনের প্রাথমিক, আদিম একটি রূপ প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনীয়দের পরিচিত ছিল।[]

অ্যারিস্টটল

[সম্পাদনা]

অ্যারিস্টটল জানতেন যে, সমুদ্রের জল বাষ্পীভবনের পর ঘনীভূত হয়ে বিশুদ্ধ পানি তৈরি করে।

আমি পরীক্ষা করে প্রমাণ করেছি যে নোনা জল বাষ্পীভূত হয়ে বিশুদ্ধ পানি তৈরি হয়, এবং বাষ্প ঘনীভূত হলে আবার নোনা জলে পরিণত হয় না।

— অ্যারিস্টটল, মেটিওরোলজিকা, বুক (II), অধ্যায় (III)

সমুদ্রের জলকে বাষ্পীভূত করে মিঠা জলে ঘনীভূত করা পাতন নয়, কারণ পাতনের মধ্যে ফুটানো জড়িত, তবে পরীক্ষাটি পাতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রাচীন ভারত ও চীন (১-৫০০ খীষ্টাব্দ )

[সম্পাদনা]

তক্ষশিলা, শাইখান ধেরি, এবং চরসাদ্দা এবং ভারতের রং মহলে প্রাপ্ত বেকড ক্লে রিটোর্ট এবং রিসিভার থেকে স্পষ্ট হয় যে প্রথম শতাব্দীতে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে পাতন প্রচলিত ছিল। এসব খননের স্থান থেকে পাওয়া বেকড মাটির পাতন সরঞ্জামগুলি তারিখ অনুযায়ী প্রাচীন ভারতীয়রা তরল পদার্থের পাতন প্রক্রিয়া জানতেন এবং এটি পানীয় বা অন্যান্য দ্রব্য প্রস্তুতির জন্য ব্যবহৃত হত।[][] ফ্র্যাঙ্ক রেমন্ড অলচিন এর মতে পোড়ামাটির পাতন টিউবগুলি "বাঁশের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছিল", যা এই প্রযুক্তির নির্দিষ্ট সময়কাল এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। এই "গান্ধার স্টিল" শুধুমাত্র খুব দুর্বল মদ বা অন্যান্য তরল প্রস্তুত করতে সক্ষম ছিল, কারণ কম তাপে বাষ্প সংগ্রহের কার্যকর উপায় ছিল না এবং পাতন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে উন্নত ছিল না।[]

চীনে, পাতন প্রক্রিয়া পূর্ব হান রাজবংশের (১ম-২য় শতাব্দী) সময়ে শুরু হয়েছিল। এই সময়ে চীনে আলকোহলিক পানীয় তৈরির পাশাপাশি ঔষধি তরল এবং অন্যান্য রাসায়নিক প্রস্তুতির জন্য পাতন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে শুরু করে। হান রাজবংশের শাসনামলে চীন সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছিল পাতন প্রক্রিয়া, যা পরবর্তীতে অন্যান্য এশীয় দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীন চীনে, পাতন প্রক্রিয়া কিছুটা উন্নত ছিল, এবং এর মাধ্যমে তারা অ্যালকোহল প্রস্তুতির পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি এবং বিভিন্ন রসায়ন প্রস্তুত করত, যা চিকিৎসা বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো।

এই সময়কালে, ভারত এবং চীনে পাতন প্রযুক্তির প্রাথমিক উদ্ভাবন এবং ব্যবহার একে অপরের থেকে আলাদা হলেও, উভয় অঞ্চলে আলাদা রকমের প্রযুক্তিগত বিকাশ ঘটেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে পাতন প্রক্রিয়া সম্ভবত মদ এবং অন্যান্য পানীয়ের প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত, যেখানে চীনে ঔষধি এবং বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনে এর ব্যবহার ছিল।

আলেকজান্দ্রিয়ান রসায়নবিদ (১-৬০০ খীষ্টাব্দ)

[সম্পাদনা]

রোমান মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় ১ম শতাব্দীতে আলকেমিস্টদের পাতনের কাজ করার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। আলেকজান্দ্রিয়া ছিল সেই সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, এবং এখানকার রসায়নবিদরা আধুনিক রসায়নের মূলনীতির ভিত্তি স্থাপন করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন গনদিনাস, যিনি 'কেমিয়া' বা রসায়নশাস্ত্রের একটি প্রাথমিক রূপ তৈরি করেছিলেন। তাঁর গবেষণার ফলে অনেক মৌলিক রসায়নবিজ্ঞানী ধারণা যেমন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ও পদার্থের গঠন সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।

এছাড়াও, আলেকজান্দ্রিয়া শহরে প্রথম বারো শতকের রসায়নবিদ, ইবন আল-হাইথাম (২য় শতাব্দী), এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত, তার প্রাথমিক রসায়ন গবেষণার জন্য আলেকজান্দ্রিয়া কেমিস্ট্রি পদ্ধতির আরও বিকাশ সাধন করেছিলেন। তিনি চূড়ান্তভাবে আলকেমি এবং রসায়নের প্রথম তত্ত্বগুলো প্রবর্তন করেন।

প্রাচীন রোমান সমাজে, রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পর্কিত ধারণা বাড়ানো এবং মৌলিক অণু গঠনের তত্ত্ব তৈরি করার জন্য এই পদ্ধতিগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম ছিল।

[]

পাতন দ্বারা ডিস্যালিনেশন

[সম্পাদনা]

পাতন দ্বারা ডিস্যালিনেশন একটি প্রাচীন প্রক্রিয়া যা জল থেকে লবণ এবং অন্যান্য দ্রব্য আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়া প্রাচীন সভ্যতাগুলিতে জল পরিশোধন ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত। এর একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে, যা আলেকজান্ডার আফ্রোডিসিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে বর্ণনা করেন। তিনি পাতনের মাধ্যমে পানির বিশুদ্ধতা বৃদ্ধি করার পদ্ধতিকে প্রথম পরিচিত করেছিলেন।

এছাড়াও, তৃতীয় শতাব্দীতে বাইজেন্টাইন মিশরে প্যানোপোলিসের জোসিমাসের অধীনে এই প্রক্রিয়া আরও উন্নত ও পরিশীলিত হয়। জোসিমাস এই সময়ে অন্যান্য তরল পাতন প্রক্রিয়াগুলির উপর কাজ শুরু করেন, যা পরে জল পরিশোধন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান পৃথক করতে ব্যবহৃত হয়। তার কাজ এবং আবিষ্কারগুলো ছিল বিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

জোসিমাসের পাতন সরঞ্জাম, যা তাঁর যুগে ব্যবহার করা হত, একটি বিশেষ ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করত যা তরল থেকে তাপমাত্রা ও চাপের মাধ্যমে অন্যান্য উপাদান পৃথক করত। এটি জল থেকে লবণ আলাদা করার জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী ছিল, যা সমুদ্রের জল বা অন্যান্য লবণাক্ত জল থেকে পানীয় জল তৈরি করতে সহায়ক ছিল।

আজকের দিনে, আধুনিক ডিস্যালিনেশন প্রযুক্তির মতোই, পাতন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পানি সংকটের সমাধানে ব্যবহৃত হচ্ছে, বিশেষ করে সেইসব অঞ্চল যেখানে তাজা পানির অভাব।

প্যানোপোলিসের জোসিমাসের পাতন সরঞ্জাম

ইসলামের স্বর্ণযুগ

[সম্পাদনা]

মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বে বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছিল। এই সময়ের দুইজন অন্যতম প্রভাবশালী রসায়নবিদ হলেন জাবির ইবনে হাইয়ান এবং আবু বকর আল-রাজি। তারা দুজনেই পদার্থের গভীরে গবেষণা করেছিলেন এবং রসায়ন বিজ্ঞানের ভিত্তি শক্ত করেছিলেন।

জাবির ইবনে হাইয়ানকে প্রায়শই রসায়নের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি বিভিন্ন ধাতু, অ্যাসিড, ক্ষার এবং অন্যান্য পদার্থের উপর ব্যাপক গবেষণা করেছিলেন। তিনি পাতন প্রক্রিয়াকে উন্নত করেছিলেন, যা একটি পদার্থকে তার উপাদানে বিভক্ত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। জাবির বিভিন্ন রাসায়নিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিলেন এবং তাদের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন। বিশেষভাবে, তিনি কাঁচামালের বিশুদ্ধকরণ এবং সঠিকভাবে আলাদা করার জন্য পাতন পদ্ধতির একটি উন্নত সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। তাঁর এই আবিষ্কারগুলি আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং পদার্থের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার পদ্ধতিকে অনেক সহজ করে তোলে।

আবু বকর আল-রাজি একজন বিখ্যাত চিকিৎসক এবং দার্শনিক ছিলেন। তিনি রসায়নেও গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি পদার্থকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছিলেন এবং তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিয়েছিলেন। আল-রাজি বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং তাদের কারণ সম্পর্কে তত্ত্ব প্রদান করেছিলেন। তাঁর গবেষণা প্রক্রিয়াগুলিতে, আল-রাজি পাতন পদ্ধতিকে বিভিন্ন ধরণের পদার্থের বিশুদ্ধতা ও বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করেছিলেন, যার ফলে তিনি রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আরও বিস্তারিতভাবে বুঝতে সক্ষম হন।

জাবির ইবনে হাইয়ান এবং আবু বকর আল-রাজি উভয়ই পাতন প্রক্রিয়ার উপর বিস্তারিত গবেষণা করেছিলেন। তারা বিভিন্ন পদার্থকে পাতন করে তাদের উপাদানগুলি আলাদা করেছিলেন এবং তাদের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করেছিলেন। তাদের এই গবেষণার ফলে রসায়ন বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল, বিশেষ করে রাসায়নিক বিশ্লেষণ এবং পদার্থের উপাদান বিচ্ছেদ সম্পর্কিত ধারনাগুলোর ক্ষেত্রে।

জাবির ইবনে হাইয়ান এবং আবু বকর আল-রাজির মতো মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানের ফলে রসায়ন বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। তাদের আবিষ্কার এবং তত্ত্বগুলি পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছিল, এবং বিশেষভাবে পাতন পদ্ধতির উন্নতির মাধ্যমে বিজ্ঞানী সমাজে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

অ্যাজিওট্রপিক পাতন

[সম্পাদনা]

দ্রবণের উপাদানগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া দ্রবণের জন্য অনন্য বৈশিষ্ট্য তৈরি করে, কারণ বেশিরভাগ প্রক্রিয়াই অ-আদর্শ মিশ্রণ জড়িত, যেখানে রাউল্টের সূত্র প্রযোজ্য নয়। এই ধরনের মিথস্ক্রিয়ার ফলে একটি ধ্রুব-স্ফুটনাঙ্ক অ্যাজিওট্রোপ হতে পারে যা এমন আচরণ করে যেন এটি একটি বিশুদ্ধ যৌগ (অর্থাৎ, একটি পরিসরের পরিবর্তে একটি একক তাপমাত্রায় ফোটে)। একটি অ্যাজিওট্রোপে, দ্রবণে বাষ্পের মতোই একই অনুপাতে প্রদত্ত উপাদান থাকে, যাতে বাষ্পীভবন বিশুদ্ধতা পরিবর্তন করে না এবং পাতন পৃথকীকরণের কারণ হয় না। উদাহরণস্বরূপ, জলে ৯৫.৬% ইথানল (ভর দ্বারা) ৭৮.১°C এ একটি অ্যাজিওট্রোপ তৈরি করে।

যদি অ্যাজিওট্রোপ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট বিশুদ্ধ বলে বিবেচিত না হয়, তবে আরও বিশুদ্ধ পাতন তৈরি করার জন্য অ্যাজিওট্রোপ ভাঙার কিছু কৌশল রয়েছে। এই কৌশলগুলি অ্যাজিওট্রপিক পাতন নামে পরিচিত। কিছু কৌশল অ্যাজিওট্রপিক গঠন "লাফিয়ে" এটি অর্জন করে (একটি নতুন অ্যাজিওট্রোপ তৈরি করতে বা চাপ পরিবর্তন করে অন্য একটি উপাদান যুক্ত করে)। অন্যরা রাসায়নিক বা শারীরিকভাবে অপবিত্রতা অপসারণ বা আবদ্ধ করে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, ৯৫% এর বেশি ইথানল বিশুদ্ধ করতে, একটি শুকানোর এজেন্ট (বা শোষণকারী, যেমন পটাশিয়াম কার্বোনেট) দ্রবণীয় জলকে অদ্রবণীয় স্ফটিকের জল এ রূপান্তর করতে যোগ করা যেতে পারে। আণবিক ছাঁকনি প্রায়শই এই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

অমিশ্রণীয় তরল, যেমন জল এবং টলুইন, সহজেই অ্যাজিওট্রোপ তৈরি করে। সাধারণত, এই অ্যাজিওট্রোপগুলিকে নিম্ন স্ফুটনাঙ্ক অ্যাজিওট্রোপ হিসাবে উল্লেখ করা হয় কারণ অ্যাজিওট্রোপের স্ফুটনাঙ্ক উভয় বিশুদ্ধ উপাদানের স্ফুটনাঙ্কের চেয়ে কম। রাউল্টের সূত্র ব্যবহার না করেই বিশুদ্ধ উপাদানগুলির বাষ্প চাপ থেকে অ্যাজিওট্রোপের তাপমাত্রা এবং গঠন সহজেই অনুমান করা যায়। দুটি তরল স্তরকে আলাদা করার জন্য একটি তরল-তরল বিভাজক (একটি ডিক্যান্টার) ব্যবহার করে পাতন সেট-আপে অ্যাজিওট্রোপ সহজেই ভেঙে যায় যা উপরে ঘনীভূত হয়। দুটি তরল স্তরের মধ্যে কেবল একটি পাতন সেট-আপে প্রতিপ্রবাহ হয়।

উচ্চ স্ফুটনাঙ্ক অ্যাজিওট্রোপ, যেমন জলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এর ২০ শতাংশ ওজনের মিশ্রণও বিদ্যমান। নাম থেকেই বোঝা যায়, অ্যাজিওট্রোপের স্ফুটনাঙ্ক উভয় বিশুদ্ধ উপাদানের স্ফুটনাঙ্কের চেয়ে বেশি।

একমুখী চাপ হেরফের করে অ্যাজিওট্রোপ ভাঙ্গা

[সম্পাদনা]

একটি অ্যাজিওট্রোপের উপাদানগুলির স্ফুটনাঙ্ক একটি ব্যান্ড তৈরি করতে ওভারল্যাপ করে। একটি অ্যাজিওট্রোপকে ভ্যাকুয়াম বা ইতিবাচক চাপের সংস্পর্শে এনে, প্রতিটিটির বিভিন্ন বাষ্প চাপের বক্ররেখা ব্যবহার করে একজনের থেকে অন্য উপাদানের স্ফুটনাঙ্ককে পক্ষপাতদুষ্ট করা সম্ভব; বক্ররেখাগুলি অ্যাজিওট্রপিক বিন্দুতে ওভারল্যাপ করতে পারে, তবে অ্যাজিওট্রপিক বিন্দুর উভয় পাশের চাপ অক্ষের আরও দূরে অভিন্ন থাকার সম্ভাবনা কম। যখন পক্ষপাত যথেষ্ট বড় হয়, তখন দুটি স্ফুটনাঙ্ক আর ওভারল্যাপ করে না এবং তাই অ্যাজিওট্রপিক ব্যান্ড অদৃশ্য হয়ে যায়।

এই পদ্ধতিটি পাতনে অন্যান্য রাসায়নিক যোগ করার প্রয়োজনীয়তা দূর করতে পারে, তবে এর দুটি সম্ভাব্য অসুবিধা রয়েছে।

  • নেতিবাচক চাপের অধীনে, ভ্যাকুয়াম উৎসের জন্য শক্তির প্রয়োজন এবং পাতনের হ্রাসকৃত স্ফুটনাঙ্কের জন্য কনডেন্সারকে শীতল চালাতে হবে যাতে পাতনের বাষ্প ভ্যাকুয়াম উৎসে হারিয়ে না যায়। শীতলকরণের বর্ধিত চাহিদার জন্য প্রায়শই অতিরিক্ত শক্তি এবং সম্ভবত নতুন সরঞ্জাম বা শীতলকের পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।
  • বিকল্পভাবে, যদি ইতিবাচক চাপের প্রয়োজন হয়, তবে স্ট্যান্ডার্ড কাঁচের জিনিসপত্র ব্যবহার করা যায় না, চাপ দেওয়ার জন্য শক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে পাতনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যেমন পচন, যা স্ফুটন ঘটাতে প্রয়োজনীয়।

একটি একমুখী পাতন এক দিকে চাপের পরিবর্তনের উপর নির্ভর করবে, হয় ইতিবাচক বা নেতিবাচক।

চাপ-সুইং পাতন

[সম্পাদনা]

চাপ-সুইং পাতন মূলত অ্যাজিওট্রপিক মিশ্রণ ভাঙ্গার জন্য ব্যবহৃত একমুখী পাতনের মতোই, তবে এখানে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় চাপই ব্যবহার করা যেতে পারে

এটি পাতনের নির্বাচনযোগ্যতা উন্নত করে এবং একজন রসায়নবিদকে শক্তি নষ্ট করে এমন চরম চাপ এবং তাপমাত্রা এড়িয়ে পাতন অপ্টিমাইজ করার অনুমতি দেয়। বাণিজ্যিক অ্যাপ্লিকেশনে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

চাপ-সুইং পাতনের প্রয়োগের একটি উদাহরণ হল ইথানল থেকে অনুঘটক সংশ্লেষণের পরে ইথাইল অ্যাসিটেট এর শিল্প পরিশোধন এর সময়।

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]
রসায়নের শুরুতে পাতন প্রক্রিয়ার জন্য, পরীক্ষাগার সরঞ্জাম হিসাবে রিটর্ট ব্যবহার করা হতো
শুষ্ক এবং অক্সিজেন-মুক্ত টলুইন পাতন করার জন্য একটি সাধারণ ব্যাবস্থা।
তেল শোধনাগারে ব্যবহৃত শিল্প-কারখানা উপযোগী ভ্যাকুয়াম পাতন কলামের চিত্র
একটি ঘূর্ণমান বাষ্পীভবন যন্ত্র ভ্যাকুয়াম তৈরির মাধ্যমে কম তাপমাত্রায় আরও দ্রুত দ্রাবক পাতন করতে সক্ষম।
সেমি-মাইক্রো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাতন। এই জয়েন্টলেস ডিজাইন, টুকরো একসাথে ফিট করার অসুবিধা দূর করে। নাশপাতি আকৃতির ফ্লাস্কটি একই আকারের গোলাকার-নিচের ফ্লাস্কের তুলনায় অবশিষ্টাংশের শেষ ফোঁটা অপসারণ করতে দেয়। ছোট হোল্ডআপ ভলিউম হ্রাস প্রতিরোধ করে। একটি বিশেষ নল pig ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন পাতিত বস্তুকে তিনটি রিসিভিং ফ্লাস্কে চালনা করার জন্য।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Harwood, Laurence M.; Moody, Christopher J. (১৯৮৯)। Experimental organic chemistry: Principles and Practice (Illustrated সংস্করণ)। Oxford: Blackwell Scientific Publications। পৃষ্ঠা 141–143। আইএসবিএন 978-0-632-02017-1 
  2. "Distillation | Definition, Process, & Methods | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৩ 
  3. Levey, Martin (1959). Chemistry and Chemical Technology in Ancient Mesopotamia. Elsevier. p. 36. As already mentioned, the textual evidence for Sumero-Babylonian distillation is disclosed in a group of Akkadian tablets describing perfumery operations, dated ca. 1200 B.C.
  4. Frank Raymond Allchin, "India: the ancient home of distillation?" Man, New Series 14:1:55-63 (1979) full text Archived 20 December 2019 at the Wayback Machine
  5. Javed Husain, "The So-Called 'Distillery' at Shaikhan Dheri - A Case Study", Journal of the Pakistan Historical Society 41:3:289-314 (Jul 1, 1993)
  6. Habib, Irfan (2011), Economic History of Medieval India, 1200–1500. Pearson Education. p. 55. ISBN 9788131727911
  7. Forbes, Robert J. (1 December 1970). A Short History of the Art of Distillation: From the Beginnings up to the Death of Cellier Blumenthal (2nd ed.). Leiden: Brill Publishers. ISBN 978-90-04-00617-1. LCCN 71879886. OCLC 1060799375. OL 13686623M. Wikidata Q107312970 – via Google Books.
pFad - Phonifier reborn

Pfad - The Proxy pFad of © 2024 Garber Painting. All rights reserved.

Note: This service is not intended for secure transactions such as banking, social media, email, or purchasing. Use at your own risk. We assume no liability whatsoever for broken pages.


Alternative Proxies:

Alternative Proxy

pFad Proxy

pFad v3 Proxy

pFad v4 Proxy